স্কুল জীবনের প্রেম
পার্ট 3
লেখকঃ সাদমান আদ্-দ্বীন
ঘুমের ভিতরেও দেখি মেঘলা এসে হুমকি দিচ্ছে।আমি তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলাম।
দেখি আমার সামনে এক জোড়া রাগী চোখ তাকিয়ে আছে।
আমিঃ কি হলো, তু তু তু তুমি এখানে
মেঘলাঃ বাসায় চলে আসলে বললে না কেনো
আমিঃ আসলে শরীর
মেঘলাঃ চলো এখন
আমিঃ আমি কোথাও যাবো না, বাইরে গেলে আমি শহীদ হয়ে যাবো। আমাকে কেউ বাচাতে পারবে না
মেঘলাঃ চুপ, ছাদে যাবো
আমিঃ আমি যাবো না, তুমি আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবা আমি জানি
মেঘলাঃ না আসলে আন্টি কে ডাকবো? আন্টি
আমিঃ আচ্ছা যাচ্ছি
⬇
⬇
⬇
মাঃ এখন শরীর ঠিক আছে
আমিঃ আছে
মেঘলাঃ আন্টি ছাদে নিয়ে যাচ্ছি। তাহলে আরো ভালো লাগবে
মাঃ আচ্ছা, ছাদের কর্ণারে যাবা না কিন্তু
আমিঃ আমরা বাচ্চা না
মাঃ হয়েছে, অনেক বড়ও হয়ে যান নি।
ছাঁদে,
মেঘলাঃ এইবার বলো, আমার বয়ফ্রেন্ড হবা?
হ্যা নাকি হ্যা?
আমিঃ আর কোনো অপশন নাই
মেঘলাঃ না, এখন উত্তর দাও
আমিঃ তাহলে আর কি করবো? হ্যা
মেঘলাঃ এইতো গুড বয়। এখন দোলনায় বসো।
আমিঃ আর তুমি
মেঘলাঃ দোলনা তো ছোট না
আচ্ছা আমি কি দেখতে খারাপ?
আমিঃ না, দেখতে খারাপ হবা কেনো?
মেঘলাঃ তাহলে তুমি আমার কথা শুনতে চইছিলে না কেনো?
আমিঃ আমরা এইসবের জন্য অনেক ছোট।
মেঘলাঃ যখন বড় হব তখনও একসাথেই থাকবো। কালকে সবাই কে বলবো ক্লাসের সবচেয়ে কিউট ছেলে আমার বয়ফ্রেন্ড
আমিঃ সবচেয়ে কিউট কে?
মেঘলাঃ কেনো তুমি
আমিঃ আমি একদমই কিউট না।
মেঘলাঃ সবাই জানে। আর এখন থেকে পড়ালেখা করবা ঠিক ভাবে
আমিঃ ঐ কাজটা আমার দ্বারা হবে না
মেঘলাঃ না হলে সত্যিই তোমার খবর আছে।
আমিঃ এইটা ঠিক না।
এভাবেই শুরু হলো আমাদের সম্পর্ক। না আমি এসবের কিছু বুঝি না ও কিছু বোঝো।
এভাবে পার হয়ে গেলো ক্লাস ৭, ৮ জে এস সি সব।
আর এই পুরো সময়ে আমি শুধু ওর জন্য পাগল হয়েছি। রেজাল্টও অনেক ভালো।
ক্লাস ৯ এ
বাবাঃ তুমি তাহলে আর্টস নিবে
আমিঃ হ্যা
মাঃ না তুই সাইন্স নিবি
বাবাঃ ওর যা মনে চায় ও নিবে, আমার মা বাবার কথা মতো আমি সাইন্স নিয়েছিলাম। ইন্টারে উঠে চেঞ্জ করেছি।
আমার বাবা শিখিয়েছিলো যে নিজের আর নিজের সন্তানের ইচ্ছার দাম দিতে
মাঃ ইচ্ছার তো দাম দিয়েছে, নাহলে ক্লাস ৭ থেকে প্রেম করার পরও কিছু বলে নি এমন হয়েছে।
পালাতেও সাহায্য করেছিলো
আমিঃ না না না না না, আমি কি নিবো ঐটা পরে, আগে তোমাদের কাহিনি বলো।
মাঃ আমি ক্লাস ৭ এ, তোর বাবাও। সেই সময় একদিন তোর বাবার সাথে কেমনে যেনো প্রেমে পরে যায়।
তারপর আমাদের রিলোশন অনেকদিন চলেছে। তোর বাবা আর্মির ট্রেনিংএ, সেই সময় আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল, তখন তোর বাবার বদলে দাদুর সাথে পালিয়েছিলাম।
বাড়িতে আসার পর নিজের মেয়ের মতো রেখেছিলো। তোর বাবা কিছুদিন পর এসে বিয়ে করে নেয় আমাকে।
বাবাঃ হয়েছে, এইবার কাল তোমার ছেলেও তার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে আসবে
মাঃ আনুক, মেয়ে ভালো হলে বিয়ে দিয়ে দিবো।
হটাৎ মেঘলা এসে,
আন্টি দ্বীন প্রাইভেট পড়বে কি
মাঃ ও তো আর্টস নিবে
মেঘলাঃ তাই নাকি প্রতীক
আমিঃ ভাবছি এখনও
মেঘলাঃ ওহ ভালো। ভাবতে থাকো, রোহানের মতো স্টুডেন্টও সাইন্সে আর তুমি যাবা আর্টস এ
আমিঃ আচ্ছা আমিও সাইন্সে।
মেঘলাঃ আধা ঘন্টা পর প্রাইভেট। রেডি হয়ে আসো
আমিঃ মা পড়বো?
মেঘলাঃ আন্টি তো আগেই বলে রেখেছিলো
আমি ভাবতেছি এখনই এত ষড়যন্ত্র, আমার বউ হলে তো এ আমার জীবন তেজপাতা করতে টাইম নিবে না।
বাসা থেকে বের হয়ে,
মেঘলাঃ আর্টস নিবা না?
আমিঃ হু
মেঘলাঃ দিবো পিটানি। প্রাইভেটে প্রতিদিন আমার সাথে বসবা। আর যদি সাইন্স চেঞ্জ করার কথা মাথায় ও আনো, তবে এমন অবস্থা করবো না
আমিঃ মাথায় লেজে কোথাও আনবো না
মেঘলাঃ তোমার লেজ আছে, ও বন্দরের তো লেজ থাকে
আমিঃ আমি মোটও বাদড় মা
মেঘলাঃ না তুমি আমার বাদড়। আমি নিজের বয়ফ্রেন্ডকে যা ইচ্ছা ডাকবো। তোমার কি
আমিঃ তাইতো, একমিনিট তোমার বয়ফ্রেন্ড তো আমি
মেঘলাঃ এমনি এমনি তো আর গাধা বলি না
আমিঃ আগে ক্লিয়ার করো তুমি গাধী না বাদরনী
মেঘলাঃ মানে?
আমিঃ আমি গাধা হলে তুমি গাধী, আমি বাদর হলে তুমি বাঁদরনী
মেঘলাঃ আমার এত কিউট বয়ফ্রেন্ড টাকে কে উল্টা পাল্টা বলে।
চলো।
প্রাইভেটে আমি আর মেঘলা এক সাথে বসে আছি।
আমিঃ ঐ, কিছুই তো বুঝতে পারি না
মেঘলাঃ প্রথম দিন না, কাল থেকে বুঝবা।
আমিঃ তাহলে আজ কি করবো
মেঘলাঃ আজ বসে থাকো।
আমিঃ মেঘলার হাত ধরে বসে থাকলাম।
মেঘলাঃ হাত ধরলে কেনো
আমিঃ ভালো লাগে
মেঘলাঃ স্যার দেখবে
আমিঃ দেখবে না, স্যারের চোখে সমস্যা, দূরের জিনিস দেখতে পারে না
মেঘলাঃ আন্দাজে
আমিঃ আমার চেয়ে ভালো কেউ জানে না।
এখন চুপ করে বসে থাকো।
প্রাইভেট শেষে,
মেঘলাঃ চলো নদীর পাড়ে যাই
আমিঃ এখন, মা বাবা বকবে
মেঘলাঃ নাহ্, টেনশন করলে কল দিবে
আমিঃ মোবাইল কই পাবো আমরা
মেঘলাঃ চলো, দেখাচ্ছি
নদীর পাড়ে,
মেঘলাঃ আজকে মা বাবা কিনে দিয়েছে
আমিঃ আমাকেই কেউ দেয় না।
মেঘলাঃ চুপ, তোমার আর আমার তো একই।
আমিঃ আচ্ছা, এখন চলো
মেঘলা আমার হাত ধরে হাটা শুরু করলো। এতদিনে আমি শুধু ওর হাতই ধরেছি।
প্রতিদিন স্কুলে, প্রাইভেটে যাওয়ার সময়, আসার সময়, বা একসাথে কোথাও গেলেই হাত ধরবে।
রাতে রুম থেকে রুমে চিঠি দিচ্ছি। আমরা এভাবেউ সারারাত চিঠি দিয়ে কথা বলি।
চিঠিতে,
আমিঃ কি করো?
মেঘলাঃ ভাবছি
আমিঃ কি?
মেঘলাঃ আছে, বলা যাবে না
আমিঃ তাহলে লিখে দাও
মেঘলাঃ তুমি আমাকে এখনও প্রপোজই করলা না।
আমিঃ করবো, করবো
মেঘলাঃ কবে
আমিঃ সময় হলেই
মেঘলাঃ আচ্ছা মা ডাকছে।
আমাদের রুম একদম উপর নিচে। তাই এইভাবে চিঠির আদান প্রদান হয়।
কিছুক্ষণ পর,
ঠকঠক ঠকঠক
আমিঃ কে
মাঃ বাইরে আয় একটু
আমিঃ কি হলো
মাঃ আমার চোখ ধরলো।
হলরুমে এসে দেখি বাবা বসে।
বাবাঃ দেখো তো ফোনটা পছন্দ হয় কি না
আমিঃ আমার জন্য ফোন
মাঃ হয়েছে, পরেরবার রেজাল্ট ভালো না করলে ফোন ব্যবহার বের করবো
আমিঃ থাক, আমি ব্যবহার করতে পারি, ব্যবহার বের করা লাগবে না। আমি নিজেই করে নিতে পারবো।
মাঃ তোর সাথে যেদিন কথায় পারবো সেদিন আমি নিজেকে ধন্য মনে করবো
আমিঃ সব স্বপ্ন কি আর সত্যি হয়। কিছু স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়।
বাবাঃ এইদিকে আয়, সত্যি কথা বলবি একটা?
Post a Comment