সিনিয়র খালাতো বোন যখন পুলিশ অফিসার
অভ্র আহমেদ লিমন
পর্বঃ ০৮
ফ্লাশব্যাক শেষ........
আমি ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। ভেবেছিলাম আমাদের বিয়ে হওয়ার পরে শিফা ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সে হয়নি। তার কাছে আমাকে নিয়ে চিন্তাই নেই। তার কাছে তার ক্যারিয়ার সবার আগে। ক্যারিয়ার গড়ার জন্য যে মেয়ে প্রিয় মানুষকে সময় দেয় না। যার কাছে ভালোবাসার থেকে ক্যারিয়ার আগে তার কাছে অন্তত সুখে থাকা যাবে নাহ। কিন্তু ওকে ছাড়া আমি বাঁচবো কিভাবে। নাহ লিমন তোকে শক্ত হতে হবে শিফা জন্য কোন একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। তখনই দরজায় কেউ নক দিলো। আমি গিয়ে দরজাটা খুললাম। দেখি বড় ভাবি ও মেঝ ভাবি দাড়িয়ে আছে
লিমন আমরা বুঝতে পারছি তোর অবস্থা কেমন এখন (বড় ভাবি)
থাক ভাবি এখন আমি এ বিষয় কোন কথা বলতে চাই না (আমি)
দেখ লিমন শিফা একটা নেশায় আছে বলতে গেলে। ওর নেশাটা ক্যারিয়ারের। এটা তুই কাটা তাহলেই তোদের সাংসারিক জীবন ভালো হবে (মেঝ ভাবি)
আমার মাথা এখন কাজ করতেছে নাহ এখন যান আপনারা বলেই দরজা লাগিয়ে দিলাম (আমি)
বিছানার উপর গিয়ে বসলাম। মাথাটা ঝিমঝিম করছে কিছু ভালো লাগতেছে নাহ তাই আস্তে আস্তে চোখ বুঝলাম। কখন ঘুমিয়ে গেছি মনে নেই। সকাল বেলা দরজা ধাক্কানোর শব্দে ঘুম ভাঙলো। ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুললাম।
কিরে কয়টা বাজে খেয়াল আছে এখনো ঘুমাচ্ছিস (বড় ভাবি)
রাতে মাথা ব্যাথা করছিলো তো তাই ঘুমাচ্ছিলাম একটু (আমি)
ওহ শিফা আসছিলো রাতে তাও দরজা খুলিস নি (বড় ভাবি)
আমি ঘুমাচ্ছিলাম টের পাইনি (আমি)
ওকে ফ্রেশ হয়ে নিচে আয় খাবার টেবিলে সবাই অপেক্ষা করছে (বড় ভাবি)
আচ্ছা আমি আসতেছি (আমি)
তারপর আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে খাবার টেবিলে গেলাম। দেখি শিফাও বসে আছে। শিফার সোজাসুজি অপরপাশে একটা চেয়ার খালি আমি সেখানে গিয়ে বসলাম। আমি শিফার দিকে একবার তাকিয়ে আর তাকাইনি। ভাবি খাবার বেড়ে দিলো আমি খেতে বসলাম।
লিমন কাল রাতে যা হয়েছে তা ভুলে যাও শিফা তার জন্য অনেক দুঃখীত। ও একজন পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছে (বাবা)
হুম (আমি)
হুম এ নিয়ে আর যেন কোন কথা না হয় (বাবা)
হুম বাবা। আমাদের কোম্পানির সবচেয়ে দূরের শাখা কোনটা (আমি)
ওটা তো কুমিল্লাতে কেন (বাবা)
বাবা আমি ঐটার দায়িত্ব নিতে চাই আর আজকেই আমি কুমিল্লা চলে যাবো (আমি)
কিন্তু (বাবাকে থামিয়ে দিলাম )
বাবা আপনি যা বলছেন আমি কখনো না করিনি বা সে সাহসও আমার হয়নি। কিন্তু আমারও একটা ক্যারিয়ার আছে। আমি চাই আমার ভবিষ্যতও উজ্জ্বল হোক (আমি)
শিফা এবার আমার দিকে তাকালো ছল ছল চোখে। আমি দেখেও না দেখার ভান করে রইলাম।
লিমন এটা একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে নাহ (মা)
দেখো মা এই বিষয়ে তোমরা যদি আর কোন কথা বলো তাহলে কুমিল্লা গেলে আর কখনো ফিরবো নাহ (আমি)
মা এবার নিশ্চুপ হয়ে গেল।
আচ্ছা তোরা যা ভালো হয় কর আমি কিছু বলবো নাহ (মা)
হুম মা চিন্তা করো নাহ আমি তোমাদের সাথে এসে দেখা করে যাবো (আমি)
সবার মাঝে পিন পিন নিরবতা কাজ করছে কেউ কোনো কথা বলছে নাহ।
সবাই খাবার শেষ করলো। আমি একটু সোফায় বসলাম। সবাই এসে বসলো।
বাবা তুই কি আমাদের ছেড়ে থাকতে পারবি (মা)
ক্যারিয়ারের জন্য সব করতে হয় মা (আমি)
আচ্ছা তোর তো নতুন বিয়ে হয়েছে আর কয়েকদিন পরে যা (মা)
মা ক্যারিয়ার গঠন করে নেই আগে তারপর অনেক সময় কাটাতে পারবো (আমি)
শিফা এবার দৌড়ে রুমে চলে গেলো।
বাবা আপনি কুমিল্লায় সব ঠিকঠাক করেন (আমি)
আচ্ছা ঠিকাছে আমি দেখছি (বাবা)
হুম আমি কুমিল্লায় যাওয়ার টিকিট কেটে আসছি (আমি)
আরে গাড়ি নিয়ে যাবি বাসে যাওয়ার কি দরকার (বড় ভাইয়া)
নাহ ভাইয়া আমার বাসে জার্নি করতে ভালো লাগে (আমি)
আর কোন কথা বললো নাহ কেউ। আমি বাইরে এসে বন্ধুদেরকে নিয়ে টিকেট কাটলাম। ওরাও যেতে চাইছিলো বলছি তোরা ইনজয় কর কয়েকদিন তারপর আসিস।
আমি টিকিট কেটে বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে রুমে প্রবেশ করলাম। দেখি শিফা বসে আছে। আমিও দেখেও না দেখার ভান করে আমার কাপড় গোছাতে লাগলাম। হঠাৎ বুঝতে পারলাম কেউ আমার পিছনে এসে দাড়িয়েছে।
বলছি না গেলো হয় না (শিফা)
আমাকে কাজ করতে হবে অনেক নাহলে ক্যারিয়ার ভালো হবে নাহ তুমি তো এটাই চাইছিলে (আমি)
কিন্তু আমরা আলাদা হতে চাইনি (শিফা)
ক্যারিয়ারের জন্য আলাদা হলে দোষ কি। তুমিই তো বলেছো সবার আগে ক্যারিয়ার (আমি)
শিফা চুপ হয়ে গেলো। আমি আমার ব্যাগ গুছিয়ে। রেডি করলাম। বিকালে বাস তাই হাতে এখনো অনেক সময় ছাদে চলে গেলাম। একটা সিগারেট ধরিয়ে টানতে লাগলাম অর্ধেক শেষ হতেই
এখন এটা প্রতিদিন খাও নাকি (শিফা)
অনেকটা তেমনই বলতে পারো (আমি)
শিফা এসে আমার কাছ থেকে সিগারেটটা নিয়ে ফেলে দিলো।
এটা কেন করলা (আমি)
চুপ একদম চুপ। কোনো কথা বলবি নাহ। তোর কোথাও যাওয়া হচ্ছে নাহ বলে দিলাম আমি (শিফা)
আমি অনেক জোরে হেসে দিলাম।
আমি আর তোমার কোনো কথা শুনবো নাহ এখন আমি আমার মতোই চলবো, তুমিও তো তোমার মতো চলতেছো আমি কি কিছু বলেছি। একি আজ বাড়িতে কেন যাও থানায় যাও অনেক কাজ আছে (আমি)
প্লিজ যাস নাহ আমি তোকে ছাড়া থাকবো কেমনে (শিফা)
কাজে জয়েন করো আর একাকিত্ব লাগবে নাহ বলেই নিচে চলে গেলাম (আমি)
আর শিফার সাথে কথা বলিনি। শিফা কথা বলতে চেয়েছিলো এড়িয়ে গিয়েছি। বিকালবেলা রেডি হয়ে বাসার সবাইকে বলে বের হলাম। শিফা দূরে দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে। আমি চলে গেলাম বাস স্টান্ডে। বাসে গিয়ে বসলাম কিছুক্ষণের মধ্যেই বাস ছেড়ে দিলো চলে গেলাম কুমিল্লার উদ্দেশ্যে।
এইদিকে খালামনি বিকালে আমাদের বাসায় এসে শুনে আমি কুমিল্লা চলে গিয়েছি। সে তার মেয়ের রুমে যায়। গিয়ে দেখে শিফা নিরবে কান্না করেছে।
এখন কান্না করে কি হবে। তুই তোর কাজের জন্য লিমনকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস (খালামনি)
মাআআ (শিফা)
এখন কিছু বলে লাভ নেই। তুই তো ক্যারিয়ার নিয়ে বিজি তোর ক্যারিয়ার গড়। কিন্তু তখন আর লিমনকে পাবি নাহ। লিমন তোর জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছে। তুই কাজ করে লিমনের কোনোদিন একটু খবর নিয়েছিস। নেস নাই নিবি কি করে তুইতো লিমনকে ভালোইবাসিস নি। ভালোবাসলে কখনো তুই তোর ক্যারিয়ারের জন্য লিমনকে ভুলে যেতি নাহ (খালামনি)
মা আমার ভুল হয়েছে কিন্তু তাই বলে ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবে (শিফা)
না ও তোমার কাছে থেকে কষ্ট পাবে আরও। যা করেছে ও ভালোই করেছে (খালামনি)
মা আমি কালই চাকরি ছেড়ে দিবো। তোমরা লিমনকে এনে দাও ওকে ছাড়া আমি বাচবো নাহ বলেই কান্না করতে লাগলো (শিফা)
কান্না করে কিছু হবে নাহ। লিমন অনেক কষ্ট পেয়েছে ও তোমার উপর অভিমান করে দূরে সরে গিয়াছে। তোমাকে ওর অভিমান ভাঙাতে হবে (মেঝ ভাবি রুমে এসে)
হুম আমি তাই করবো কাল চাকরি ছেড়ে দিয়ে লিমনের কাছে চলে যাবো। আমি ওকে ছাড়া থাকতে পারবো নাহ (শিফা)
হুম দেখ কিহ হয় (খালামনি)
হুম আম্মু তুমি খালামনিকে বলে আমার যাওয়ার ব্যবস্থা করো (শিফা)
এইদিকে আমি...........
Post a Comment