সিনিয়র খালাতো বোন যখন পুলিশ অফিসার by অভ্র আহমেদ লিমন পর্বঃ ০৭

সিনিয়র খালাতো বোন যখন পুলিশ অফিসার

অভ্র আহমেদ লিমন

পর্বঃ ০৭



💔

তারপর সবাই খেতে গেলাম। খাওয়ার মাঝখানে

বাবা আমাকে কালকেই জয়েন করতে হবে কাজে (শিফা) 

মা কয়েকদিন ঘোরাঘুরি করে কাজ শুরু করতি (খালু)

নাহ বাবা আমার কাছে আমার ক্যারিয়ার সবকিছুর আগে (শিফা)

কিন্তু মা তুই এতো ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছিস কেন (খালামনি)

মা আমি চাই আমার ভবিষ্যত প্রজন্ম সুখে শান্তিতে কাটাতে পারুক (শিফা)

সেটা নিয়ে তোকে এতো ভাবতে হবে নাহ (মা)

খালামনি আমি চাই নিজেই সবকিছু করতে (শিফা)

মা দেখিস তুই কিন্তু বেশি করতেছিস যার জন্য পরে না আবার পস্তাতে হবে (মা)

আমি এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলতে চাই না (শিফা)

মা বাদ দাও এসব (আমি)

শিফার কথাগুলো শুনে খারাপ লাগলো। তাই চুপচাপ খাবার খেয়ে নিলাম।

পরেরদিন থেকে শিফা চাকরিতে জয়েন করলো। আমিও পড়াশুনা করতে লাগলাম। এখন শিফা আর আমাকে সময় দেওয়ার মতো সময় পায়না। আমি ফোন দিলেও ফোন রিসিভ করে ব্যস্ত আছি বলে কেটে দেয়। আমার ওর জন্য খুব মন খারাপ করে। তবুও নিজেকে শ্বান্তনা দেই এটা ভেবে যে সারাদিন বিজি থাকে, অনেক কষ্ট করে হয়তো ক্লান্ত থাকে আমাকে সময় দিতে পারেনা। 

এভাবে চলে গেলো ৯ মাস.....

আমি শেষ পরীক্ষা দিয়ে হল থেকে বের হলাম। তারপর একটা সিগারেট ধরালাম। এখন এটাই নিত্য সঙ্গী। শিফা আর আগের মতো খোঁজ নেয়না। চাকরিতে জয়েনের পর থেকে আজ পর্যন্ত কথা ভালো ভাবে কথা হয়নি। তবে প্রতিদিন কলেজে এসে আমাকে দেখে গেছে কথা বলার সময় পায়নি। আমি তার এই অবহেলাতেই মানিয়ে নিয়েছি। এখন ওকে আর মনে পড়ে কষ্ট লাগেনা। আজ ওর চাকরির জন্য আমার ভালোবাসাকে কষ্ট দিলো। তাই ওকে নিয়ে আর ভাবিনা।

লিমন তোর কি কোনো বিষয় নিয়ে মনে কষ্ট আছে?? সারাক্ষণ দেখি মন খারাপ (দূর্জয়)

হঠাৎ বন্ধুর ডাকে কল্পনা কাটলো।

ভাই তেমন কিছু নাহ এমনি ভালো লাগে নাহ (আমি)

বাদ দে চল আজকে আমি ট্রিট দিব (আনান)

হুম দে ভাই পরীক্ষার টেনশনে অনেকদিন ঠিকমতো খাওয়া হয়নি (সিয়াম)

নাহ থাক অন্য একদিন যাবো (আমি)

ঐ চুপ থাক আজকে সারাদিন ঘুরবো আর খাওয়া দাওয়া করবো। তুইও সাথে থাকবি (সিয়াম)

হুম লিমন আজকে আমরা অনেক আনন্দ করবো (দূর্জয়)

ওকে খাওয়ার বিল আমার আর ঘুরতে যাওয়ার খরচ তোদের (আনান)

ওকে (দূর্জয়)

লিমন কথা বলছিস নাহ কেন তুই না ঘুরলে আমার ঘুরতে যাবো নাহ (সিয়াম)

আরে নাহ আজকে ঘুরবো আমরা চল (আমি)

শুধু শুধু আমার জন্য ওদের আনন্দটা নষ্ট করতে চাই নাহ। যাই হোক আমরা ১মে রেস্টুরেন্টে গেলাম। একটা টেবিলে গিয়ে বসে খাবার অর্ডার করলাম

লিমন দেখতো পিছনের টেবিলে শিফা আপু কিনা (আনান)

আমি পিছনে ফিরে দেখি সত্যিই শিফা। তাও আবার একটা ছেলের সাথে। এটা দেখার সাথে সাথেই আমার বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলাম। শিফা আমার দিকে তাকালো। সে অবাক হয়তো আমাকে সে আশা করেনি। আমি নিজেকে সামনে ফিরিয়ে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করলাম।

হুম শিফা আপু (আমি)

তার সাথে ছেলেটা কে?? ওহ বুঝছি এই জন্যই তোর মন খারাপ থাকে সারাদিন (দূর্জয়)

আরে নাহ তেমন কিছু নাহ (আমি)

আমরা বুঝি ভাই। চল আমরা এই রেস্টুরেন্টে থাকবো নাহ অন্য একটাতে যাই (আনান)

আচ্ছা চল (সিয়াম)

আরে এখানেই থাকি সমস্যা কি (আমি)

ভাই আমরা বুঝি অবুঝ নই চল এখান থেকে (দূর্জয়)

তারপর আমরা উঠে দাড়িয়ে হাটা ধরলাম.. 

লিমন এদিকে আসো তো (শিফা) 

আমি তার কাছে গিয়ে

হ্যা আপু বলো (আমি)

শিফা আমার মুখ থেকে আপু ডাক শুনে আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকালো

কোথায় যাচ্ছো তোমরা (শিফা)

একটু বাইরে কাজ আছে তাই যেতে হবে আমাদের (আমি)

আচ্ছা ওর সাথে পরিচিত হয়ে যাও (শিফা)

হুম। হাই আমি লিমন শিফা আপুর খালাতো ভাই বলেই ছেলেটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলাম (আমি)

হেলো আমি তৌহিদ তোমাদের এখানকার থানার এস আই (তৌহিদ) 

ওহ আচ্ছা ভাইয়া আপনারা সময় কাটান আমার একটু যেতে হবে (আমি)

তখনই শিফা উঠে আমার গালে একটা ঠাস করে বসিয়ে দিলো। আমি গালে হাত দিয়ে ওর দিকে তাকালাম 

ওর সাথে আজকেই পরিচয় আমার তাই কফি খাওয়ার কথা বলেছে না করতে পারিনি সেজন্য এখানে আসা আমাদের (শিফা)

আরে আরে ওকে মারলেন কেন (তৌহিদ) 

আপনি ওকে চিনেন নাহ ও হচ্ছে আমার পিয়নসি লিমন (শিফা)

ওহ তাই বলেন আপনাকে আর আমাকে একসাথে দেখে মাইন্ড করেছে মনে হয় (তৌহিদ) 

আচ্ছা আপু তোমার কাজ শেষ এখন আমি গেলাম (আমি)

বলেই চলে আসলাম ওখান থেকে। তারপর অর্ডার করা খাবারের বিল দিয়ে না খেয়ে চলে গেলাম রেস্টুরেন্টের বাইরে। তারপর ওরা আমার মন ভালো করার জন্য বিভিন্ন যায়গায় ঘুরতে লাগলো আমাকে নিয়ে। অন্যদিকে

শিফা তখনই অফিসে oc এর কাছে ফোন দিলো

হ্যালো আসসালামু আলাইকুম স্যার (শিফা)

ওয়াআলাইকুম আসসালাম শিফা ( স্যার)

স্যার আমার ৭ দিনের ছুটি লাগবে (শিফা)

কেনো কোথাও যাবে নাকি (স্যার)

নাহ স্যার আমার বিয়ের জন্য (শিফা)

ওহ আচ্ছা ঠিকাছে কনগ্রেচুলেশন (স্যার)

ধন্যবাদ স্যার (শিফা)

তারপর ফোন কেটে দিলো শিফা। 

আচ্ছা তৌহিদ আমাকে বাসায় যেতে হবে কাজ আছে (শিফা)

ওকে চলুন পৌঁছে দেই (তৌহিদ) 

নাহ থাক আমি যেতে পারবো আপনি চলে যান (শিফা)

তারপর শিফা সেখান থেকে গাড়ি নিয়ে ডাইরেক্ট আমাদের বাসায় গেলো

খালামনি খালামনি (শিফা)

একি শিফা কতদিন পর আসলি (মা)

এখন থেকে তোমাদের বাসায় থাকতে চাই (শিফা)

তো থাক সমস্যা কি (মা)

খালামনি লিমনের তো পরীক্ষা শেষ এবার আমাকে তোমার মেয়ে করেই নিয়ে আসো (শিফা)

ওহ তাহলে এই ব্যাপার (মা)

হুম খালামনি আমি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছি কম দিনের এর মধ্যেই বিয়েটা সেরে ফেলো (শিফা)

আচ্ছা আমি তোর আব্বু আম্মুকে ডাকতেছি (মা)

আচ্ছা আমি এখন রুমে গেলাম একটু বিশ্রাম নিবো (শিফা)

আচ্ছা যা (মা)

এদিকে আড্ডা আর ঘুরাঘুরি করে রাতে বাসায় ফিরলাম আমি।

একি বাসায় এতো মেহমান কেন (আমি)

কাল তোর আর শিফার বিয়ে (বড় ভাবি) 

কি বলেন ভাবি এতো তাড়াতাড়ি (আমি)

হুম কেনো কোনো সমস্যা নাকি (মেঝ ভাবি) 

ব্যাপক সমস্যা। আর কিছুদিন পর বিয়েটা করি। পিছিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করুন (আমি)

তোমার বিয়ে কালকেই হবে এটাই আমার শেষ কথা পিছন থেকে (বাবা)

বাবার কথায় আমি আর কোনো কথা না বলে রুমে গেলাম। কারণ আমাদের পরিবারে সবাই বাবাকে ভয় পায়। রুমে বসে ভাবতেছি শিফা কি বিয়ের পর চাকরি করবে?? ও তো বলেছিলো বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দিবে। ও তো আমাকে ভালোবাসে তার প্রমাণ আজকে পেলাম রেস্টুরেন্টে। তাইতো মনে হয় রেগে বাসায় এসে বিয়ের কথা বলেছে। যাই হোক ওকে তো আমিও ভালোবাসি বিয়েটা আগে হোক তারপর ইনশাআল্লাহ সব ঠিক হয়ে যাবে। যাই হোক পরেরদিন আমাদের বিয়েটা সম্পন্ন করা হলো। এর মধ্যে শিফার সাথে আমার দেখা হয় নি। যাই হোক রাতে বন্ধুরা বাসর ঘরে পাঠালো।🧨

বাসর ঘরে আমি রুমে ঢুকতেই দেখি বউ আমার পুলিশের পোশাক পড়ে বসে আছে। আমাকে রুমে ঢুকতে দেখেই আমার কাছে এসে সালাম করলো। আমি কিছু বললাম

তুমি হয়তো আজকে আমার গায়ে পুলিশের পোশাক দেখে অবাক হয়েছো তাই না (শিফা)

আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়লাম 

আসলে আজকে আমার জরুরী থানায় যেতে হবে আমাদের এখানে একজন খুন হয়েছে আমাকে ঐ বিষয়ে তদন্ত করতে হবে (শিফা)

তুমিতো এখন ছুটিতে আছো (আমি)

ছুটিতে আছি তো কি হয়েছে আমাদের এখানে খুন হয়েছে আমার একটা দায়িত্ব আছে না (শিফা)

তোমাকে আমি এমনিতেই চাকরি করতে মানা করেছি তারপরও (আমি)

আরে এখন এতো কথা বলার সময় নেই আমার। আমার কাছে আমার দায়িত্ব সবার উপরে বলেই চলে গেলো (শিফা)

আমি ধপ করে বিছানায় বসে পড়লাম। ওর কাছে আমার উপরেও ওর ডিউটি। এটাই কি ওর ভালোবাসা। মেয়েদের মন তো বলা যায় না। ওকে চাকরি করতে মানা করেছিলাম। ও বলেছে বিয়ের পর ছেড়ে দিবে। কিন্তু এখন সে বাসর রাতেও তার ডিউটির জন্য বের হয়েছে।

ফ্লাশব্যাক শেষ........

🥀🥀

waiting for next part..........

Post a Comment

Previous Post Next Post